পঞ্চম শ্রেণির - বাংলা রচনা - ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ভূমিকা:
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- “Student life is the seed time of life.” অর্থাৎ ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের বীজ বপনের সময়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সময়কে সাধারণ অর্থে ছাত্রজীবন বলা হয়। যদিও দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। ছাত্রজীবনের প্রধান ধর্ম অধ্যয়ন করা। এর পাশাপাশি তাদের আরও অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সমাজের কল্যাণকর সব ক্ষেত্রেই ছাত্রদের ভূমিকা রয়েছে। তাই তো ছাত্রজীবন মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ও মধুর সময়।
ছাত্রজীবনের স্বরূপ:
কবির ভাষায়-
“বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নতুনভাবে নানা জিনিস শিখছি দিবা রাত্র”
ছাত্রজীবনের প্রকৃত স্বরূপ এটাই। মানুষ আমৃত্যু কোনো না কোনো বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে। তবুও সংসার ও কর্মজীবনে প্রবেশের আগে প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক পড়াশোনার সময়টিকেই ছাত্রজীবন ধরা হয়। এ জীবন বড়ই মধুর ও সুন্দর। তাই ছাত্রদের কর্তব্য এমনভাবে নিজেকে গঠন করা, যাতে সে মানুষ হয়ে উঠতে পারে। এ সময় একজন ছাত্র যে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জন করে, যে চিন্তাবীজ রোপণ করে, তাই-ই তার ভবিষ্যৎ জীবনের চালিকাশক্তি। তাই বলা হয় ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক।
ছাত্রজীবনের কর্তব্য:
“ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ”- অর্থাৎ ছাত্রদের প্রধান তপস্যা হচ্ছে অধ্যয়ন। ছাত্রজীবন কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি-পর্ব। জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগেই একজন ছাত্রের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। অধ্যয়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা হওয়া উচিত । তবে পড়াই একমাত্র তপস্যা নয়-সে সঙ্গে চাই শরীর গঠন। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- “A sound mind is sound body.” অর্থাৎ সুস্থ দেহ-ই সুন্দর মন। কিংবা “Health is wealth.” স্বাস্থ্যই সম্পদ। এ সম্পদ ছাত্রজীবনেই অর্জন করতে হবে। এজন্য পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়াম ও সময়মতো খেলাধুলা করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
“অন্ন চাই প্রাণ চাই আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।”
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব:
ছাত্রজীবনে দেশ, সমাজ ও পরিবারের প্রতি আনেক দায়িত্ব থাকে। ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেম গড়ে তুলতে হবে। সমাজের কল্যাণমূলক কাজে নিজকে নিয়োজিত করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি সদাচার প্রদর্শন করতে হবে। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। নিয়ম-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, অধ্যবসায়ী হতে হবে, সৎ চরিত্রবান হতে হবে। কেননা কথায় আছে-
“When money is lost nothing is lost
When health is lost something is lost,
When character is lost everything is lost.”
ছাত্রজীবনে দেশাত্মবোধ:
ছাত্রজীবন দেশাত্মবোধ গঠনের সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র। এ সময় থেকেই দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে দেশের প্রতি অনুগত থেকে কাজ করে যেতে হবে। ছাত্রজীবনেই দেশপ্রেম, সেবাপরায়ণতা, স্বার্থত্যাগ, সাহসিকতা, জনসেবা, অধ্যবসায় প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করতে হবে। এ সময় থেকেই জনকল্যাণ করার সুপ্ত বীজ উপ্ত হলে প্রগাঢ় দেশপ্রেমের ভিত রচিত হবে।
ছাত্রজীবন চরিত্র গঠনের সময়:
চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ছাত্রজীবনেই এ সম্পদকে অর্জন করতে হয়। চরিত্র গঠনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা ও সাধনা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রসমাজকে শিষ্টাচার, ভদ্রতা, সত্যবাদিতা, বিনয়, কর্তব্যপরায়ণতা প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করে সৎ চরিত্র গঠন করতে হবে।
ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবোধের গুরুত্ব:
ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলা অনুশীলনের সর্বোত্তম সময়। মানবজীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন নিয়মের শাসন। ছাত্রজীবন শৃঙ্খলাবোধ চর্চার একটি উত্তম ক্ষেত্র। প্রত্যেক ছাত্রকে একটি যথাযথ নিয়মের মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করতে হবে। কেননা নিয়ম ছাড়া জীবন আর নাবিক ছাড়া নৌকা দুই-ই মূল্যহীন।
নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে ছাত্রজীবন:
নৈতিক মূল্যবোধ হলো মানব জীবনে অনুসরণযোগ্য এমন কিছু আচরণবিধি, যা জীবনব্যবস্থাকে করে তোলে সুন্দর, নির্মল, কলুষতামুক্ত। এ বোধ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, সৌহার্দ্যবোধ প্রভৃতি গুণাবলি। নৈতিক মূল্যবোধ মানব চরিত্রকে করে তোলে সার্থক ও সুষমামণ্ডিত। প্রকৃত শিক্ষা ছাত্রজীবনে এ মূল্যবোধ গঠন করে। শিক্ষার বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগে গঠিত মূল্যবোধ একজন ছাত্রকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তার সুকুমার বৃত্তিগুলো বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। শ্রদ্ধা, ভক্তি, সম্মান, ভালোবাসা, স্নেহ প্রভৃতি ছাত্রজীবন থেকেই নৈতিক মূল্যবোধকেই সুদৃঢ় করে।
উপসংহার:
ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের প্রস্তুতিপর্ব । সকালের সূর্য যেমন সুন্দর দিনের আভাস দেয় তেমনি ছাত্রজীবনের সাফল্যও সফল জীবনের ইঙ্গিত দেয়। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ছাত্রসমাজকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই অধ্যয়নের পাশাপাশি সৎ গুণাবলীর চর্চা করা উচিত। তাহলেই আমরা বলতে পারব-
“আমরা শক্তি আমরা বল
আমরা ছাত্রদল”
সূত্র- যুগান্তর