ষষ্ঠ শ্রেণি - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা (৪র্থ অধ্যায়) সৃজনশীল প্রশ্ন
ষষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দুই বান্ধবী ফারজানা ও কাকলি। পড়াশোনা শেষে একই ব্যাংকে একই সাথে একই পদে চাকরিতে জয়েন করে। চার বছর পর কাকলি পদোন্নতি পায়। এতে ফারজানা মনে কিছুটা কষ্ট পায়। কিছুদিন পর থেকে ফারজানা কাকলির বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু দোষ-ত্রুটি অন্য সহকর্মীদের কাছে বলে বেড়াতে লাগলো। এতে অফিসের কর্মপরিবেশ কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়। একদিন তাদের অফিসের অফিস সহায়ক বৃদ্ধ হামিদা বেগম ফারজানা বেগমকে বলল, ‘আপা কোনো অবস্থাতেই কাকলি আপার অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে কোনো সমালোচনা করা ঠিক নয়।’
ক. সিদক অর্থ কী?
খ. আখলাকে হামিদাহ্ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. ফারজানার কর্মকাণ্ডে কী প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হামিদা বেগমের বক্তব্যের তাৎপর্য মূল্যায়ন কর।
প্রশ্নের উত্তর
ক. সিদক-এর অর্থ সত্যবাদিতা।
খ. মানুষের উত্তম বা প্রশংসনীয় আচরণকে আখলাকে হামিদাহ্ বলা হয়ে থাকে। মানুষ সামাজিক জীব। পরিবার এবং সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করে। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষের নানা আচার-আচরণের প্রকাশ ঘটে। এর মধ্যে কিছু আচরণ রয়েছে, যা সবার জন্য কল্যাণকর। এ ধরনের প্রশংসনীয় আচরণকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয়ে থাকে।
গ. ফারজানার কর্মকাণ্ডে গিবত বা পরনিন্দা প্রকাশ পেয়েছে। গিবত অর্থ পরনিন্দা, অসাক্ষাতে দুর্নাম করা, অপরের দোষ প্রকাশ করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়, কারো অনুপস্থিতিতে যদি তার সম্পর্কে কষ্ট পাওয়ার মত কথা বলা হয় তাকে গিবত বলে। ফারজানার আচরণে এ নিন্দনীয় বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের দুই বান্ধবী ফারজানা ও কাকলি একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে চাকরিতে যোগ দেয়। চার বছর পর শুধু কাকলির পদোন্নতি হয়। এতে ফারজানা মনে কষ্ট পায়। এর কিছুদিন পর থেকে সে অন্য সহকর্মীদের কাছে কাকলির পুরনো দোষত্রুটির কথা বলতে থাকে। এতে অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে ফারজানার এ কাজটি গিবত। গিবত করা একটি নিন্দনীয় কাজ। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। রাসুল (স.) বলেন, ‘গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার অপেক্ষাও গুরুতর অপরাধ’ (আল-মুজামুল আওসাত)। আর ফারজানার মধ্যে এ নিন্দনীয় কাজটিই প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. গিবত সম্পর্কে হামিদা বেগমের বক্তব্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । কারো অগোচরে তার দোষ ত্রুটি অন্যের কাছে প্রকাশকে গিবত বলে। যা ইসলামে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। গিবতের কারণে সমাজে অশান্তি ও কলহ বিবাদের সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুতা তৈরি হয়। গিবত শোনাও পাপের কাজ। কোনো অবস্থাতেই গিবত করা গ্রহণযোগ্য নয়। হামিদা বেগম তার বক্তব্যে গিবতকেই বোঝাতে চেয়েছেন। উদ্দীপকের ফারজানা সহকর্মীদের কাছে কাকলির গিবত করায় অফিস সহায়ক বৃদ্ধ হামিদা বেগম প্রতিবাদ করেন। তিনি যথার্থই বলেন যে, অন্যের অনুপস্থিতিতে তার সমালোচনা করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। পবিত্র কুরআনে গিবত করাকে মৃত ভাইয়ের শরীরের মাংস খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। যার গিবত করা হয় তিনি নিজের অজ্ঞাতেই অন্যের কাছে হেয় হন। তাই সবার উচিত গিবত করা ও শোনা থেকে বিরত থাকা। পরিশেষে বলা যায়, গিবত প্রসঙ্গে হামিদা বেগমের বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
Source- courstika