অষ্টম শ্রেণি বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১ : উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শিক্ষক ক্লাসে প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাস পড়ানোর সময় বিভিন্ন প্রাণীর চিত্রসংবলিত একটি পোস্টার ঝুলিয়ে প্রাণীগুলোর পর্বের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব নিয়ে বিশদ আলোচনা করলেন। পোস্টারের প্রাণীগুলো কেঁচো, অক্টোপাস, সাগর কুসুম, জেলিফিশ, শামুক, এসিডিয়া, তারামাছ, প্রজাপতি, সমুদ্র শসা, হাতি, গোলকৃমি, সাপ, ময়ূর, ঝিনুক।
(ক) শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে?
(খ) শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা লেখো?
(গ) উল্লিখিত প্রাণীদের মধ্যে অ্যানিমিলিয়া জগতের শেষের তিনটি পর্বের প্রাণীদের ২টি করে বৈশিষ্ট্যসহ ছকে বিন্যাস করো।
(ঘ) পোস্টারের প্রথম ও শেষের প্রাণী দুটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :
(ক) প্রাণিজগতের বিভিন্ন প্রাণীর সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিভাগ, শ্রেণি, গোত্র, গণ, প্রজাতিতে বিভক্ত করার প্রক্রিয়াকে শ্রেণিবিন্যাস বলে।
(খ) শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা :
—শ্রেণিবিন্যাসের সাহায্যে পৃথিবীর সব উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সহজে অল্প পরিশ্রমে ও অল্প সময়ে জানা যায়।
—নতুন প্রজাতি শনাক্ত করতে শ্রেণিবিন্যাস অপরিহার্য।
—ধীরে ধীরে প্রাণিকুলের মাঝে যে পরিবর্তন ঘটেছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
—জীবের মধ্যে মিল-অমিলের ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়।
—অসংখ্য জীবকুলকে একটি নির্দিষ্ট রীতিতে বিন্যস্ত করে গোষ্ঠীভুক্ত করা যায়।
—প্রাণিকুলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যায়।
(গ) অ্যানিমিলিয়া জগতের শেষের তিনটি পর্ব, মলাস্কা, একাইনোডার্মাটা ও কর্ডাটা। নিচে উক্ত পর্বের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্যসহ ছকে বিন্যস্ত করা হলো :
kalerkantho
(ঘ) পোস্টারের প্রথম প্রাণী হলো কেঁচো। নিচের কেঁচোর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো :
kalerkantho
—কেঁচো যে মাটিতে বাস করে সেই মাটি নরম হয় এবং মাটির রন্ধ্রতা বৃদ্ধি পায়।
—কেঁচোর বিষ্ঠা উত্তম সার।
—কেঁচো হিউমাস তৈরিতে সাহায্যে করে।
—মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব হ্রাস করে উদ্ভিদ জন্মনোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
—মাছ ধরার টোপ হিসেবে কেঁচো ব্যবহৃত হয়।
—মাছ, পাখি প্রভৃতি প্রাণীর খাদ্য হিসেবে কেঁচো ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কেঁচো খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
পোস্টারের শেষের প্রাণীটি হলো শামুক। এটি মলাস্কা পর্বের অন্তর্গত। শামুক বিভিন্নভাবে মানুষের উপকার করে থাকে। যেমন :
—পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শামুকের মাংস আমিষ জাতীয় খাদ্য হিসেবে বেশ সমাদৃত।
—শামুক থেকে মূল্যবান মুক্তা পাওয়া যায়।
—বোতাম ও অন্যান্য শৌখিন দ্রব্য প্রস্তুতে শামুক ব্যবহৃত হয়।
—পানিতে ভাসমান জৈব পদার্থ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে পানিকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্যে করে।
—শামুক পুড়িয়ে চুন তৈরি করা হয়।
—শামুকের মাংস বড়শির টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
—শামুক ভূমিক্ষয় নিবারক হিসেবে কাজ করে।
—শামুকচূর্ণ এবং দেহের কোমল অংশ হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
—ওষুধ হিসেবে শামুকের ব্যবহার গ্রামবাংলায় দেখা যায়।
সুতরাং ওপরের আলোচনার প্রতীয়মান হয়—শামুক অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে খুবই জনপ্রিয়।
প্রশ্ন ২ : নিচের চিত্র দুটি লক্ষ করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
(ক) দ্বিপদ নামকরণ কী?
(খ) বৈজ্ঞানিক নাম লেখার চারটি নিয়ম উল্লেখ করো।
(গ) চিত্রের প্রাণী দুটির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) উক্ত প্রাণীর দুটো পর্বের মধ্যে ৪টি বৈসাদৃশ্য নির্ণয় করো।
উত্তর :
(ক) একটি প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম দুই অংশ বা পদবিশিষ্ট হয়। এই নামকরণকে দ্বিপদ নামকরণ বলে।
(খ) বৈজ্ঞানিক নাম লেখার নিয়ম :
—প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নামে দুটি পদ—প্রথমটি গণ ও দ্বিতীয় শব্দটি প্রজাতি থেকে নেওয়া হয়।
—হাতে লিখলে ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করতে হবে এবং দুটি শব্দের নিচে আলাদা আলাদাভাবে দাগ টানতে হবে।
—গণ অংশটির প্রথম অক্ষর Capital letter এবং প্রজাতি অংশটির প্রথম অক্ষর Small letter লিখতে হবে।
—বৈজ্ঞানিক নামের শব্দ দুটি ল্যাটিন হবে।
(গ) চিত্র : ক হলো স্পঞ্জিলা। এদের বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো :
—এদের দেহ অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। এই ছিদ্রপথে গলিত দ্রবীভূত খাদ্যবস্তু পানির সঙ্গে প্রবেশ করে।
—এদের কোষগুলো সুবিন্যস্ত হয়।
—দেহ অরীয় প্রতিসম অর্থাৎ দেহকে কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর দুটি বা দুইয়ের বেশিসংখ্যক সমান অংশে ভাগ করা যায়।
চিত্র খ : খ হলো হাইড্রা। এদের বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
—এরা দ্বিস্তরী অর্থাৎ কোষগুলো অ্যাক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামে দুটি স্তরে সাজানো থাকে এবং উভয় স্তরের মধ্যবর্তী স্থানে মেসোগ্লিয়া নামক জেলির মতো পদার্থ থাকে।
—এদের দেহের ভেতরে একটি মাত্র ফাঁপা গহ্বর দেখা যায়, একে সিলেন্টেরন বলে।
—দেহ অরীয় প্রতিসম অর্থাৎ দেহকে কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর দুটি বা দুইয়ের বেশিসংখ্যক সমান অংশে ভাগ করা যায়।