সপ্তম শ্রেণি - বাংলা - প্রথম পত্র - গদ্য: পাখি
গদ্য—পাখি : লীলা মজুমদার
সৃজনশীল প্রশ্ন : স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে জাওয়াদ দেখে একটা কুকুরছানা ওর পিছু পিছু আসছে। বাদামি রঙের মোটাসোটা ছানাটিকে ওর বেশ পছন্দ হয়। ও বাসায় এনে ওটাকে আদর-যত্নে পুষতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই ওটা বাড়ির সবার প্রিয় হয়ে ওঠে।
ক) ‘পাখি’ গল্পটি লীলা মজুমদারের কোন গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে?
উত্তর : ‘পাখি’ গল্পটি লীলা মজুমদারের ‘গল্প-সংকলন’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
খ) কুমুর চোখে ঝাপসা হয়ে আসে কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কুমুর সহপাঠীরা কুমুকে ফেলে ওপরের ক্লাসে উঠে যাবে ভেবে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
লীলা মজুমদারের ‘পাখি’ গল্পের কুমু অসুস্থতার কারণে তার ডান পা মাটি থেকে আধা হাত পরিমাণের বেশি তুলতে পারে না। সে জন্য তার মাসিরা প্রস্তাব করে সোনাঝুরিতে তিন মাস দিদিমার কাছে রাখলে কুমু সুস্থ ও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কুমুর মা-বাবাও এ প্রস্তাবে খুশি হয়। কারণ লাটু বলে মজার ছেলেটার সঙ্গে ওর হেসেখেলে দিন কেটে যাবে। কিন্তু কুমু ভাবে অসুস্থতায় ওর তিন মাস গেছে শুয়ে, তিন মাস পায়ে লোহার ফ্রেম বেঁধে হাঁটতে শিখে। আরো তিন মাস যদি দিদিমার বাড়িতে থাকে, তাহলে সে পড়া সব ভুলে যাবে। তার সহপাঠী হাসি, রত্না সবাই ওকে ফেলে ওপরের ক্লাসে উঠে যাবে এ কথা মনে করে কুমুর চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসে।
গ) উদ্দীপকের জাওয়াদ ‘পাখি’ গল্পের কুমুর সাথে কিভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : উদ্দীপকের জাওয়াদ ‘পাখি’ গল্পের কুমুর সঙ্গে প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘পাখি’ গল্পের কুমু তার শারীরিক সুস্থতার জন্য সোনাঝুরিতে ওর দিদিমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। দোতলা ঘরের জানালার ধারে আরাম কেদারায় বসে কুমু দূরের বিলের জলে বুনো হাঁসের দলের ঝুপঝাপ জলে নামা দেখে। সে সময় ওর সঙ্গে কিশোর লাটুও থাকে। একদিন সকালে কুমু জানালা দিয়ে চেয়ে দেখে লেবুগাছের পাতার আড়ালে ডাল ঘেঁষে কোনোমতে আঁকড়ে-পাকড়ে বসে রয়েছে ছোট একটা ছাই রঙের বুনো হাঁস। তার একদিকের ডানা একটু ঝুলে রয়েছে আর তাতে রক্ত জমাট বেঁধেছে। শিকারির গুলিতে আহত পাখিটাকে কুমু আর লাটু মিলে গভীর মমতায় ওটার ক্ষতস্থানে চুন-হলুদ দিয়ে বেঁধে দেয়। তারপর ঝুড়িতে বসিয়ে লেবুগাছের ডালে বাসা বেঁধে দেয়। ওদের যত্নে দিন দিন পাখিটা সুস্থ হয়ে একদিন বুনো হাঁসের দলের পিছু পিছু আকাশে উড়ে যায়।
উদ্দীপকের জাওয়াদও একটা পথের কুকুরছানাকে বাসায় এসে আদর যত্ন করে পুষতে থাকে। প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের এই দিকটি ‘পাখি’ গল্পের কুমুর উপর্যুক্ত বক্তব্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ)“সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি ‘পাখি’ গল্পের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ‘পাখি’ গল্পের পাখিটির সেরে ওঠার প্রতিটি ধাপ থেকে কুমু নিজেও যে সুস্থ হওয়ার প্রেরণা পায় এই দিকটি উদ্দীপকের নেই।
‘পাখি’ গল্পের কুমু সোনাঝুরিতে দিদিমার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শিকারির গুলিতে আহত একটা বুনো হাঁসকে বাঁচাবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কুমু আর লাটু মিলে সেবাযত্ন করে একটু একটু করে পাখিটাকে সুস্থ করে তোলে। পাখিটা যখন দিন দিন সুস্থ হচ্ছিল, কুমুও তখন ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে পায়ে জোর বাড়াতে থাকে। আস্তে আস্তে ওর ডান পা এক বিঘতের চেয়ে বেশিই তুলতে পারে। ক্রমান্বয়ে কুমু নিজের বিছানা নিজে পাতা, স্নান করা, কাপড় কাচা ও সেই সঙ্গে লেখাপড়ার কাজও করে। তার সেরে ওঠার কথা মা-বাবাকে চিঠিতে জানিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে নিজের পরীক্ষা দেওয়ার কথাও জানায়। বুনো হাঁসটা সুস্থ হয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তার ডানাটা যেমন একটু ছোট ছিল, কুমু সুস্থ হলেও তার ডান পা-টাও একটু ছোটই থেকে যায়। তাহলে সে পাখিটার সেরে ওঠার প্রতিটি ধাপ থেকে নিজেও সুস্থ হওয়ার প্রেরণা পায়।
অন্যদিকে উদ্দীপকের জাওয়াদের কাজে শুধু প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে, যা ‘পাখি’ গল্পের একটি দিক।
উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘পাখি’ গল্পের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।