একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের পদ্য (দ্বিতীয় ভাগ) এর উল্লেখিত ৮টি কবিতার জন্য বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্ন ও উত্তর
একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের পদ্য (দ্বিতীয় ভাগ) এর উল্লেখিত ৮টি কবিতার জন্য বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো:
১। স্মৃতির মিনার – জীবনানন্দ দাশ
প্রশ্ন:
কবিতায় ‘স্মৃতির মিনার’ দিয়ে কবি কী প্রতীকী অর্থ প্রকাশ করেছেন? কবিতার মাধ্যমে জীবনের কোন দিকগুলো কবি তুলে ধরেছেন?
উত্তর:
‘স্মৃতির মিনার’ প্রতীকী অর্থে জীবনের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার একটি স্থায়ী নির্মাণকর্ম। জীবনানন্দ দাশ দেখিয়েছেন জীবনের সুখ, দুঃখ, অর্জন ও ক্ষয়—সব কিছুই স্মৃতিতে গেঁথে যায়। এই স্মৃতিই মানুষকে পরিচয় দেয়, জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। কবিতায় জীবনের গতিশীলতা ও স্মৃতির চিরস্থায়ীতা সুন্দরভাবে মিশে রয়েছে। তাই ‘মিনার’ শব্দটি দিয়ে এক ধরনের স্থায়িত্ব ও গৌরব বোঝানো হয়েছে।
২। বায়ান্নর দিনগুলি – মহাদেব সাহা
প্রশ্ন:
কবিতায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? কবির ভাষায় আন্দোলনের আদর্শ ও মূল্যবোধ কী?
উত্তর:
‘বায়ান্নর দিনগুলি’ কবিতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও ত্যাগের মহত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। কবি দেখিয়েছেন কীভাবে যুবকরা প্রাণ উৎসর্গ করে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় লড়েছেন। আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য নয়, এটি ছিল সাংস্কৃতিক ও জাতীয় স্বাতন্ত্র্যের জন্য সংগ্রাম। কবির ভাষায় এই আন্দোলন মানবতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, স্বাধীনচেতা মনোভাব ও জাতির ঐক্যের প্রতীক।
৩। প্রার্থনা – আল মাহমুদ
প্রশ্ন:
কবিতায় ‘প্রার্থনা’ কীভাবে জীবন ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের প্রতিফলন?
উত্তর:
কবিতায় ‘প্রার্থনা’ মানব ও প্রকৃতির সাদৃশ্য ও সম্পর্কের আবেগঘন প্রকাশ। কবি জীবনের শান্তি, সুস্থতা ও সৃষ্টির ধারাবাহিকতা কামনা করেছেন। প্রার্থনা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি সমগ্র প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য। কবিতায় মানব ও প্রকৃতির একাত্মতা ফুটে উঠেছে, যা আমাদের পরিবেশ ও মানবতা রক্ষার আহ্বান।
৪। নবজাতকের প্রতি – রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
প্রশ্ন:
কবিতায় নবজাতকের প্রতি আশাবাদের ভাবনা কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে? এটি জাতির ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে কী বার্তা দেয়?
উত্তর:
নবজাতককে কবি জীবনের নবজাগরণের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। এটি আশা, সম্ভাবনা ও নতুন সূচনার দিশারী। নবজাতকের মাধ্যমে জাতির নতুন প্রজন্মের ওপর বিশ্বাস ও দায়িত্বের বার্তা প্রকাশ পেয়েছে। কবিতার ভাষায় নবজাতককে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা ও ভালোবাসার গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে, যা জাতির বিকাশের মূল চাবিকাঠি।
৫। পতাকা – নির্মলেন্দু গুণ
প্রশ্ন:
কবিতায় পতাকার প্রতীকী অর্থ কী এবং এটি জাতি ও দেশপ্রেমের কোন দিকগুলোকে তুলে ধরে?
উত্তর:
পতাকা জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও জাতিগত পরিচয়ের প্রতীক। কবিতায় পতাকার রঙ ও আকৃতি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এটি মানুষের সংগ্রাম, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগের চিহ্ন। পতাকা মানুষের হৃদয়ে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে, যা জাতিকে একত্রিত রাখে।
৬। আমার পরিচয় – সুকান্ত ভট্টাচার্য
প্রশ্ন:
কবিতায় ‘আমি’ চরিত্রের আত্মপরিচয় কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে? এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে কী বার্তা দেয়?
উত্তর:
‘আমি’ কবিতায় সাধারণ মানুষের জীবন, সংগ্রাম ও স্বপ্নের প্রতিফলন। কবি নিজের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন, যা সামাজিক বাস্তবতার সাথে মিল আছে। ব্যক্তিগত স্তরে এটি আত্মসংশোধন ও আত্মস্বীকৃতির প্রতীক, আর সামাজিক স্তরে এটি মানুষের সম্মান ও মর্যাদার দাবি। কবিতার মাধ্যমে ‘আমি’ আমাদের একাকিত্ব ও সমাজের সঙ্গে সংযোগের কথা বলে।
৭। আঠারো বছর বয়স – ফররুখ আহমদ
প্রশ্ন:
কবিতায় আঠারো বছর বয়সের কোন বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠেছে? এটি যৌবনের কোন আবেগ ও দায়িত্বের প্রকাশ?
উত্তর:
আঠারো বছর বয়সকে কবি জীবনের এক উত্তেজনাপূর্ণ ও স্বপ্নময় সময় হিসেবে দেখিয়েছেন। এখানে যৌবনের উদ্দীপনা, আশা, সৃষ্টিশীলতা এবং ভবিষ্যতের প্রতি আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি রয়েছে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের উত্তেজনা ও দ্বিধা। এটি এক তরুণ মানুষের জীবনের মনস্তাত্ত্বিক অগ্রগতি ও আবেগের প্রকাশ।
৮। কৃষক – জসীমউদ্দীন
প্রশ্ন:
কবিতায় কৃষকের চরিত্র ও ভূমিকা কীভাবে চিত্রিত হয়েছে? এটি সমাজ ও মানুষের জীবনে কৃষকের গুরুত্ব কী?
উত্তর:
কৃষককে কবি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও পরিশ্রমী শ্রেণি হিসেবে তুলে ধরেছেন। কৃষকের ধৈর্য, পরিশ্রম ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা কবিতায় ফুটে উঠেছে। তিনি দেশের খাদ্য উৎপাদনের মূল ভিত্তি এবং দেশের অগ্রগতির রূপকার। কৃষকের গুরুত্ব মানুষের জীবনযাত্রা ও জাতির সমৃদ্ধির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে রয়েছে।














