নবম শ্রেণি - অর্থনীতি | অধ্যায় নং- ১ : সৃজনশীল নং- ২
শিবলি সিফাত ‘ক’ নামের দেশে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। যে দেশের সবাই সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। কারণ, সে দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই। সেখানকার জমিজমা, কলকারখানার মালিক সরকার। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় দেশটি পরিচালিত হয়। কিন্তু তার দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ রয়েছে, তবে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়।
প্রশ্ন
ক. মুদ্রাস্ফীতি কী?
খ. অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয় কেন?
গ. ‘ক’ নামের দেশে কোন ধরনের অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শিবলি সিফাতের দেশের অর্থব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার কি কোনো মিল রয়েছে? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর
ক. উৎপাদন স্থির থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বেড়ে যাওয়াকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।
খ. অর্থনীতির বিভিন্ন ধারণাকে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করার কারণে অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয়।অ্যাডাম স্মিথ তাঁর সময়ে বিক্ষিপ্ত, ভাসমান ও বিভিন্ন স্থানে আলোচিত অর্থনীতির বিভিন্ন ধারণাকে সংঘবদ্ধ করে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। পরে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ১৭৭৬ সালে ‘An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nation’ নামক গ্রন্থের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। আজকের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো স্মিথের এই বই। এ কারণে অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে ‘ক’ নামের দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজের অধিকাংশ সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় থাকে। সরকার দেশের উৎপাদন ও বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়।
এখানে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ সরকারি নীতি ও নির্দেশের অধীনে সুচিন্তিতভাবে পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনুযায়ী উৎপাদন কার্য পরিচালনা করে। দেশটিতে উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগের কোনো সুযোগ নেই।উদ্দীপকে শিবলি সিফাত ‘ক’নামের দেশে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে দেশের সবাই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা করে। কারণ, সে দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। সেখানকার জমিজমা, কলকারখানার মালিকও সরকার। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় দেশটি পরিচালিত হয়। এখানে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধরিত হয় বলে এখানে উৎপাদন ক্ষেত্রে অপচয় ও অতি উৎপাদনের আশঙ্কা থাকে না, যা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বিদ্যমান। তাই বলা হয়,‘ক’ নামের দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।
ঘ. শিবলি সিফাতের দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা প্রচলিত। এর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার মিল আছে বলে আমি মনে করি।মিশ্র অর্থব্যবস্থায় যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীর পক্ষে সহজেই উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব। এর অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি যেকোনো বৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে পারে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে অর্থনেতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে সরকার চাইলে প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো দ্রব্যের দাম, উৎপাদন কিংবা ভোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।উদ্দীপকের শিবলি সিফাতের দেশে ব্যক্তিগতভাবে কারখানা খোলা ও মুনাফা লাভের সুযোগ আছে। তবে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। এটি মিশ্র অর্থব্যবস্থারই উদাহরণ, যাতে সম্পদের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় উভয় ধরনের মালিকানা স্বীকৃত। বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থাও একই ধরনের।বাংলাদেশের অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যেমন উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন, ভোগ ইত্যাদি কার্যক্রম ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের কিছু মৌলিক ও ভারী শিল্প এবং জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার পরিচালনা করে থাকে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণও আছে। তাই ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিবলি সিফাতের দেশের অর্থব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার মিল লক্ষ করা যায়।
সূত্র- প্রথম আলো।