জেনে নিন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও কাঠামো।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় হলো শিক্ষার জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দপ্তর। এর অধীনে রয়েছে কয়েকটি অধিদপ্তর। অধিদপ্তরগুলো শিক্ষা প্রকল্প ও কারিগরি প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি শিশু বিনামূল্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। বাংলাদেশের শিক্ষাতেও প্রতিটি দেশের মতো সামগ্রিকভাবে শিক্ষার উপাদান, ধরণ ও কাঠামোর মাধ্যমে নিজস্ব শিক্ষানীতি বিদ্যমান রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে পরিচালিত হয় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। যুগের সাথে মিলিয়ে চলার জন্য নতুন ধারণা, নতুন বিষয়বস্তু নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কাঠামোতে ও শিক্ষার ধরণেও পরিবর্তন এসেছে।
বাংলাদেশের সরকারের শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নতুনভাবে নির্ধারিত হয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন, উপবৃত্তি প্রদান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম অন্যতম। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা রাষ্ট্র দ্বারা অর্থায়ন করা হয়, সরকারি বিদ্যালয় গুলোতে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং উচ্চশিক্ষা সরকারি ও বেসরকারি দু'ভাবেই পরিচালিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তালিকাভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। পাঠ্যবই উন্নয়ন, অনুমোদন এবং ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছে। এই বোর্ড মূলত প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যিমিক পর্যায়ে শিক্ষাক্রম এর নিশ্চয়তা প্রদান করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দশটি (১০) শিক্ষা বোর্ডে অধিভুক্ত (শিক্ষা বোর্ড সমূহের তথ্য জানতে- ক্লিক করুন)।
১৯৭৬-১৯৭৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স (ব্যানবেইনস) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত হয়। এটি বাংলাদেশের শিক্ষাতথ্য ও শিক্ষা পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ ও প্রচারের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে।
এছাড়া বাংলাদেশে `অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো`র তত্ত্বাবধানে অনেক অলাভজনক সংগঠন রয়েছে, যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অনানুষ্ঠানিক ও আধা-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
⫸ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কয় স্তর বিশিষ্ট?
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সাধারণত তিন স্তর বিশিষ্ট, যথা-
✔ প্রাথমিক শিক্ষা স্তর
✔ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর
✔ উচ্চ শিক্ষা স্তর (বিশ্ববিদ্যালয়)
(১) প্রাথমিক শিক্ষা কি? (Primary Education) : বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার শুরুর স্তরটি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। এ স্তর অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় ৫ বছর মেয়াদী (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী) হয়। ছয় থেকে দশ বছর পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। মাদ্রাসা শিক্ষা ধারায় এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরটি বাংলাদেশ সরকারের স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ন্ত্রিত।
Note- জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর সুপারিশ অনুযায়ী ১ম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
(২) মাধ্যমিক শিক্ষা কি? (Secondary Education) : বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন (১৯৭৪) মতে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক শিক্ষার পরবর্তী ও উচ্চশিক্ষার পূর্ববর্তী শিক্ষা স্তরই মাধ্যমিক শিক্ষা নামে অভিহিত এবং জাতীয় শিক্ষানীতি (২০১০) মতে, নতুন ও পরিমার্জিত রূপে নবম হতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত শিক্ষাক্রমের অধ্যন স্তরই হলো মাধ্যমিক শিক্ষা। মাধ্যমিক শিক্ষার পরিধি হল ৭ বছর, যা ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত।
এই মাধ্যমিক শিক্ষাকে তিনটি উপস্তরে ভাগ করা হয়েছে, যা হল-
✔ ৩ বছর মেয়াদ নিম্ন মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত)
✔ ২ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক (৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত)
✔ ২ বছর মেয়াদী উচ্চ মাধ্যমিক (একাদশ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত)।
নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের সময়সীমা ১১ বছর পর্যন্ত, মাধ্যমিকে ১৪ ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১৬ বছর পর্যন্ত। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ছাড়াও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষা ডিগ্রী কলেজ, স্কুল কাম কলেজ এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
(৩) উচ্চ শিক্ষা কি? (Graduate & Post-graduate or Higher Secondary education) :
উচ্চ শিক্ষা মানব সম্পদ উন্নয়নের মেরুদণ্ড স্বরূপ। শিক্ষার ৩ স্তরের মধ্যে সর্বশেষ পর্যায় হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা। এটি একটি অ-বাধ্যতামূলক শিক্ষাগত স্তর। যা উচ্চ বিদ্যালয় বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় তথা সাধারণ শিক্ষা সমাপ্তি অনুসরণ করে চলমান।
বাংলাদেশের শিক্ষা ধারায় উচ্চ শিক্ষা সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদী অর্থাৎ স্নাতক পাশ ৩ বছর মেয়াদী ও ২ বছর মাস্টার্স ডিগ্রি অথবা ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক পাশ ও মাস্টার্স ডিগ্রি ১ বছর। অতিরিক্ত ন্যূনতম ২ বছর এম.ফিল ও ৩ বছর পিএইচডি ডিগ্রির জন্য সময় প্রয়োজন হয়। ডিগ্রি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা প্রদানের প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া সাধারণ শিক্ষা ধারার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষায় মেডিকেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, আইন, প্রকৌশল ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ৫৩টি পাবলিক (বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তথ্য জানতে- ক্লিক করুন) ও ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তথ্য জানতে- ক্লিক করুন)) এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-এর তত্ত্বাবধানে অধিভুক্ত কলেজের মাধ্যমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় উচ্চ শিক্ষা দেয়া হয়।
⫸ বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামো :
বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমান শিক্ষা কাঠামো তিনটি ধারায় অবস্থিত-
✔ সাধারণ শিক্ষা
✔ মাদ্রাসা শিক্ষা
✔ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ।
(১) সাধারণ শিক্ষা : বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ৩টি সাধারণ শিক্ষা কাঠামো নিয়ে গঠিত। যা ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে, যথা- প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা।
(২) মাদ্রাসা শিক্ষা : মাদ্রাসা শিক্ষায় সাধারণত ৫টি স্তরে বিভক্ত, যথা-
✔ এবতেদায়ী (সাধারণ শিক্ষা ধরার প্রাথমিক স্তর), যা ৫ বছর মেয়াদী
✔ দাখিল (সাধারণ শিক্ষা ধারার মাধ্যমিক স্তর), যা ৫ বছর মেয়াদী
✔ আলিম (সাধারণ শিক্ষা ধারার উচ্চ মাধ্যমিক স্তর), যা ২ বছর মেয়াদী
✔ ফাজিল (সাধারণ শিক্ষা ধারার স্নাতক (পাশ) ও স্নাতক সম্মান), যা ৩ বা ৪ বছর মেয়াদী
✔ কামিল (সাধারণ শিক্ষা ধারার মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর), যা ২ বছর মেয়াদী।
(৩) কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা : কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে ভোকেশনাল শিক্ষাও বলা হয় (কারিগরি শিক্ষা বোর্ড তথ্য জানতে- ক্লিক করুন)। যার ৩টি স্তর রয়েছে-
✔ সার্টিফিকেট কোর্স, যা ১ বা ২ বছর মেয়াদী (যাতে ৮ম শ্রেণি উত্তীর্ণরা ভর্তিযোগ্য)
✔ ডিপ্লোমা কোর্স, যা ৩ বছর মেয়াদী (মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণরা ভর্তিযোগ্য)
✔ ডিগ্রি কোর্স, যা ৪ বছর মেয়াদী (উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ভর্তিযোগ্য)।
এছাড়াও এসএসসি ভোকেশনাল, এইচএসসি ভোকেশনাল, কৃষি ডিপ্লোমা, প্রকৌশল ডিপ্লোমা ইত্যাদি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
__________________________________________
তথ্য সুত্রঃ
১। http://www.moedu.gov.bd
২। https://dailyeducationbd.com