এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র: দ্বিতীয় অধ্যায় গুণগত রসায়ন
১. গুণগত রসায়ন কাকে বলে?
রসায়নের যে শাখায় পদার্থের গঠন ও বৈশিষ্ট্যসহ বিভিন্ন গুণগত দিক আলোচনা করে হয়, তাকেই গুণগত রসায়ন বলে।
২. আলফা কণা কী?
হিলিয়াম পরমানু থেকে দুটি ইলেকট্রন অপসারণ করলে অবশিষ্ট যা পাওয়া যায় তাই হিলিয়াম নিউক্লিয়াস যার অপর নাম আলফা কণা।
৩. নিউক্লিয়ন সংখ্যা কী?
কোনো মৌলের পরমানুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট প্রোটন এবং নিউট্রনের সংখ্যাকে বলা হয় নিউক্লিয়ন সংখ্যা বা পারমানবিক ভর।
৪. He+He+ এর ক্ষেত্রে বোর তত্ত্ব কেন প্রযোজ্য?
এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণু হাইড্রোজেনকে বিবেচনায় নিয়ে বোর পরমাণু মডেল বা বোর তত্ত্ব প্রদান করা হয়। He+He+ আয়নে 1টি মাত্র ইলেকট্রন রয়েছে। তাই বোর মডেলের সাহায্যে এর বর্ণালী ব্যাখ্যা করা যায়।
৫. কোয়ান্টাম সংখ্যা কী?
পরমাণুতে একটি ইলেকট্রন কোন শক্তিস্তরে আছে, শক্তিস্তরটি বৃত্তাকার না কি উপবৃত্তাকার এবং শক্তিস্তরের ইলেকটন নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘড়ির কাটার দিকে আবর্তন করছে না কি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে এসব বিষয় প্রকাশের জন্য যে কয়েকটি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়, তাদেরকেই কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে।
৬. 2d, 3f অরবিটালগুলো কেন সম্ভব নয়? ব্যাখ্যা কর।
2d অরবিটাল অসম্ভব। কারণ n=2 এর জন্য l এর মান 0 এবং 1 যারা 2s এবং 2p অরবিটালকে বুঝায়। যেহেতু l=2 পাওয়া যাবে না n=2 এর জন্য, সেহেতু, 2d অরবিটালও সম্ভব হবে না।
3f অরবিটালের ক্ষেত্রেও n=2 এর জন্য l=0, 1, 2 পাওয়া যায় যা s, d এবং d অরবিটালকে বুঝায়। যেহেতু l=3 পাওয়া যায় না, তাই 3f অরবিটালও সম্ভব না।
৭. 4f অরবিটালের সম্ভাব্যতা যাচাই কর।
4f এর n=4 এর জন্য l=0, 1, 2, 3 পাওয়া যায়। যেহেতু l=3 পাওয়া যায় যা f অরবিটাল প্রকাশ করে তা এখানে বিদ্যমান, তাই 4f অরবিটালের অস্তিত্ব আছে।
৮. অরবিট কাকে বলে?
পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চারদিকে যে নির্দিষ্ট শক্তি বিশিষ্ট প্রধান কক্ষপথে ইলেকট্রন আবর্তন করে তাদেরকে অরবিট বলে।
৯. অরবিটাল কাকে বলে?
নিউক্লিয়াসের চারদিকে ত্রিমাত্রিক যে অঞ্চলে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেই অঞ্চলকে অরবিটাল বলে।
১০. নোড ও লোব কাকে বলে?
১১. পলির বর্জন নীতি বিবৃত কর এবং ব্যাখ্যা কর।
একই পরমাণুতে যে কোনো দুটি ইলেকট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান কখনোই এক হতে পারেনা।
অর্থাৎ, কোনো একটি পরমাণুতে অবস্থানরত দুটি ইলেকট্রনের তিনটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান এক হলেও চতুর্থ কোয়ান্টাম সংখ্যা অবশ্যই ভিন্ন হবে। যেমন হিলিয়াম পরমাণুর দুটি ইলেকট্রনের জন্য চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান নিম্নরূপ।
প্রথম ইলেকট্রন: n=1, l=0, m=0, s=+1/2
দ্বিতীয় ইলেকট্রন: n=1, l=0, m=0, s=-1/2
১২. আউফবাউ নীতি লিখ?/আউফবাউ নীতিটি কী?
পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের সময় ইলেকট্রন প্রথমে নিম্ন শক্তির অরবিটালে যায় এবং পরে ক্রমান্বয়ে উচ্চশক্তির অরবিটালে প্রবেশ করে। শক্তির মাত্রার ক্রমের একাংশ হলো: 1s<2s<2p<3s<3p<4s<3d<4p<5s<4d
১৩. পটাশিয়ামের ১৯তম ইলেকট্রন 3d উপস্তরে না গিয়ে 4s উপস্তরে যায় কেন?
আউফবাউ নীতি অনুসারে পটাশিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস দেখা যাক।
K(19) - 1s22s22p63s23p63d04s11s22s22p63s23p63d04s1
এখানে দেখা যাচ্ছে ১৯ তম ইলেকট্রনটি 3d উপশক্তিস্তর আগে থাকলেও সেখানে না গিয়ে 4s উপশক্তিস্তরে গিয়েছে। এজন্য অরবিটালের শক্তি দায়ী। আউফবাউ নীতি থেকে আমরা জানতে পারি ইলেকট্রন প্রথমে কম শক্তি সম্পন্ন অরবিটালে প্রবেশ করে। 3d এবং 4s এর শক্তির তুলনা করা যাক।
3d অরবিটালের ক্ষেত্রে, n=3, l=2
অর্থাৎ, শক্তি (n+l) = (3+2) =5
4s অরবিটালের ক্ষেত্রে, n=4, l=0
অর্থাৎ, শক্তি (n+l) = (4+0) = 4
যেহেতু 3d অরবিটালের চেয়ে 4s অরবিটালের শক্তি কম, তাই ইলেকট্রন আগে 4s অরবিটালে প্রবেশ করেছে।
১৪. 3d এবং 4p অরবিটালের মধ্যে কোনটিতে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করবে?
আমরা জানি, যে অরবিটালের শক্তি কম, ইলেকট্রন আগে সেই অরবিটালে প্রবেশ করে। এখন,
3d অরবিটালের ক্ষেত্রে, n=3, l=2
অর্থাৎ, শক্তি (n+l) = (3+2) =5
4s অরবিটালের ক্ষেত্রে, n=4, l=1
অর্থাৎ, শক্তি (n+l) = (4+1) = 5
যেহেতু এক্ষেত্রে দুটি অরবিটালেরই শক্তি সমান, তাই এক্ষেত্রে n এর মান যার কম, ইলেকট্রন সেখানে আগে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে 3d তে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করবে।
১৫. হুন্ডের নীতি বিবৃত কর।
সমান শক্তি সম্পন্ন বিভিন অরবিটালে ইলেকট্রনগুলো এমনভাবে অবস্থান করবে যেন তারা সর্বাধিক সংখ্যা অযুগ্ম বা বিজোড় অবস্থায় থাকতে পারে এবং এ বিজোড় ইলেকট্রনগুলোর স্পিন হবে একমুখী।
১৬. কপার (Cu) এবং ক্রোমিয়াম (Cr) এর ইলেকট্রন বিন্যাস ব্যতিক্রম কেন?
Cu ও Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখা যাক,
Cu (24) - 1s22s22p63s23p63d54s11s22s22p63s23p63d54s1
Cr (29) - 1s22s22p63s23p63d104s11s22s22p63s23p63d104s1
এখানে দেখা যাচ্ছে যে কপার এবং ক্রোমিয়ামের 4s উপশক্তিস্তর পূর্ণ না করেই 3d উপশক্তিস্তরে প্রবেশ করেছে ইলেকট্রন। এর কারণ হচ্ছে, সমশক্তি সম্পন্ন অরবিটালসমূহ ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ বা অর্ধপূর্ণ অবস্থায় বেশি পরিমাণে স্থিতিশীলতা অর্জন করে। এই কারণে এদের ইলেকট্রন বিন্যাসে ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। এখানে কপারের ক্ষেত্রে 3d অরবিটালে 5 টি ইলেকট্রন আছে এবং 4s এ 1টি। দুটি অরবিটালই এখানে অর্ধপূর্ণ অবস্থায় আছে। 3d44s23d44s2 তে একটি অরবিটাল পূর্ণ হলেও অন্যটি পূর্ণ বা অর্ধপূর্ণ কোনোটিই না। এর থেকে দুটিই অর্ধপূর্ণ থাকলে তা বেশি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে ক্রোমিয়ামের ক্ষেত্রেও একটি পূর্ণ এবং অন্যটি অর্ধপূর্ণ থাকায় অধিক স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। এজন্য Cu এবং Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস ব্যতিক্রম হয়।
১৭. দৃশ্যমান আলো কী?
যে আলোক বিকিরণ কোনো বস্তুর ওপর পড়লে বস্তুটি দেখা যায়, তাকে দৃশ্যমান আলো বলে। এটি সমগ্র তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের সামান্য অংশ। এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 380 থেকে 780 nm।
১৮. বর্ণালী কী?
বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তথা বিভিন্ন বর্ণের আলোক রশ্মির সমাহারই বর্ণালী।
১৯. হাইড্রোজেন পরমাণুতে একটি ইলেকট্রন থাকা সত্ত্বেও হাইড্রোজেন বর্ণালীতে বিভিন্ন রেখা পাওয়া যায় কেন?
হাইড্রোজেন অণু উচ্চ শক্তির প্রভাবে হাইড্রোজেন পরমাণুতে পরিণত হয়। অসংখ্য হাইড্রোজেন পরমাণুর ইলেকট্রন ভিন্ন পরিমাণের শক্তি শোষণ করে। ফলে উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন উচ্চতর শক্তিস্তরে উন্নীত হয়। এই উচ্চশক্তি সম্পন্ন শক্তিস্তরগুলোকে উত্তেজিত স্তর বলা হয়। উচ্চ শক্তি স্তরে ইলেকট্রনগুলো স্থিতিশীল থাকে না। শক্তির উৎস সরিয়ে নিলেই ইলেকট্রনগুলো বিভিন্ন উচ্চ শক্তিস্থ থেকে শক্তি বিকিরণ করে নিম্ন শক্তিস্তরগুলোতে ফিরে আসে। এই ফিরে আসার সময় হাইড্রোজেনের অসংখ্য পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের শক্তি বিকিরণ করে বিভিন্ন বর্ণালী সৃষ্টি করে। একারণেই হাইড্রোজেন বর্ণালীতে বিভিন্ন রেখা পাওয়া যায়।
২০. প্রতিপ্রভ পদার্থ বা ফ্লোরোসেন্স পদার্থ কী?
যে সকল পদার্থ UV অঞ্চলের 200-375 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বর্ণালী শোষণ করে কিন্তু 400-780 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দৃশ্যমান বর্ণালী বিকিরণ করে সে সকল পদার্থকে ফ্লোরোসেন্স পদার্থ বা প্রতিপ্রভ পদার্থ বলা হয়।
২১. অণুপ্রভা কাকে বলে?
UV রশ্মি পরমাণু কর্তৃক শোষিত হয় এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দৃশ্যমান রশ্মি নিঃসরণ ঘটার যে ঘটনা তাকে অনুপ্রভা বলে।
২২. UV রশ্মি কী? UV রশ্মির একটি ব্যবহার লেখ।
দৃশ্যমান বেগুনী রশ্মির চেয়ে শক্তিশালী বিকিরণকে অতিবেগুনী রশ্মি বা UV রশ্মি বলে। UV রশ্মির অনেক ব্যবহারের মধ্যে একটি ব্যবহার হলো জাল টাকা চিহ্নিত করা।
২৩. শিখা পরীক্ষা কী?
একটি পরিষ্কার প্লাটিনাম তার গাঢ় HCl এ ভিজিয়ে নমুনা লবণ তাতে লাগিয়ে বুনসেন বার্নারের জারণ শিখায় উত্তপ্ত করলে বিভিন্ন ধাতুর জন্য বৈশিষ্ট্যমূলক বর্ণ সৃষ্টি হয় যার সাহায্যে লবণে ধাতব আয়নের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়। এই পরীক্ষাকেই শিখা পরীক্ষা বলে।
২৪. শিখা পরীক্ষায় গাঢ় HCl ব্যবহার করা হয় কেন?
ধাতব লবণসমূহ আয়নিক। ফলে এগুলো সাধারণত অনুদ্বায়ী। শিখা পরীক্ষায় গাঢ় HCl ব্যবহার করা হয় ওই ধাতব লবণের ক্লোরাইড তৈরির জন্য।
CaCO3+HClCaCO3+HCl(গাঢ়) = CaCl2+H2O+CO2CaCl2+H2O+CO2
২৫. তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলতে কী বুঝ?
পর পর দুটি তরঙ্গ খাদ বা তরঙ্গ শীর্ষের মধ্যকার দূরত্বকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে।