পঞ্চম-শ্রেণি : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
মানবাধিকার
প্রশ্ন : নারী-অধিকার লংঘনের তিনটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : নারীরা সামজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও পুরুষশাসিত সমাজে নানাভাবে নারী অধিকার লংঘিত হচ্ছে। নিচে নারী অধিকার লংঘনের তিনটি উদাহরণ দেওয়া হলো।
* মেয়েরা ছেলেদের মতো শিক্ষার সমান সুযোগ পায় না।
* কাজের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের মতো সমান পারিশ্রমিক পায় না।
* বাড়িতে কাজে সহায়তাকারীরা যথাযথ পারিশ্রমিক খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা পায় না। আবার তারা অনেক সময় বিদেশে পাচারও হয়ে যায়।
সুতারাং নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সবার সচেষ্ট হতে হবে।
প্রশ্ন : কোন প্রতিষ্ঠান মানবাধিকারকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে? কখন?
উত্তর : জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে অনুমোদন করেছে ‘মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণাপত্র।’ এ ঘোষণাপত্র অনুযায়ী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, নারী-পুরুষ, আর্থিক অবস্থাভেদে বিশ্বের সব দেশের সব মানুষের এ অধিকারগুলো আছে। সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারগুলো হচ্ছে মানবাধিকার তাই ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস হিসাবে সারা বিশ্ব পালন করে।
প্রশ্ন : শিশুশ্রমের কারণে শিশুরা কোন অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হয়?
উত্তর : অনেক শিশু দারিদ্র্যের কারণে কাজ করতে বাধ্য হয়। গ্রামে শিশুরা ক্ষেতে, ইটের ভাটায় কাজ করে। শহরের শিশুরা বাসাবাড়িতে, দোকানে, কল-কারখানায় কাজ করে। অনেকে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। শিশু শ্রমের কারণে শিশুরা নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন-
* শিশু শ্রমিকরা সাধারণত লেখাপড়ার সুযোগ পায় না। তারা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ শিক্ষার অধিকার একটি প্রধান মানবাধিকার।
* অনেক সময় আমরা সামান্য কারণে বা বিনা কারণে শিশুদের শারীরিক নির্যাতন করি। বাড়িতে কাজে সহায়তাকারী ব্যক্তিরা কখনো কখনো এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়।
* অনেক সময় তাদের বাড়ির অন্যদের সমান খাবার, পোশাক, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয় না। এতে তাদের মানবাধিকার লংঘন হয়।
* আমাদের দেশ থেকে প্রায়ই শিশুদের বিদেশে পাচার করে তাদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক কাজে ব্যবহার করা হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেকে আহত হয় বা মারা যায়।
* অনেক শিশুর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কল-কারখানায় নানা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত থাকে। ফলে তাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকে না।
সুতরাং শিশুরা শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, জীবনের নিরাপত্তা লাভসহ নানা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আসলে তারা সব ধরনের ন্যায্য মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রশ্ন : মানবপাচার বলতে কী বোঝায়
উত্তর : মানবপাচার বলতে অবৈধভাবে জনশক্তি রফতানিকে বুঝায়। আমাদের দেশ থেকে প্রায়ই নারী ও শিশুদের বিদেশে পাচার করা হয়। সেখানে তাদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক, নানা অসামাজিক কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে কেউ আহত হয়। আবার কেউবা মারাও যায়। আবার মানবপাচারকারীরা অনেক সময় তাদের বিভিন্ন স্থানে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডে এমন বহু গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে সবার অজান্তে এসব পাচর হওয়া ব্যক্তিদের নানা অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আসলে মানবপাচার একটি মানবাধিকারবিরোধী কাজ। এটি একটি জঘন্য অপরাধমূলক কাজ। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
নারী-পুরুষ সমতা
প্রশ্ন : নারী নির্যাতনের দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর : নারীরা সমাজের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হলেও পুরুষশাসিত এ সমাজে নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার। নারী নির্যাতনের দুটি কারণ নিচে দেওয়া হলো-
* নারী নির্যাতনের মূল কারণ হচ্ছে পুরুষের তুলনায় নারী বা মেয়েদের নিু সামাজিক মর্যাদা।
* শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, বিভিন্ন কুসংস্কার নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ।
* নারী নির্যাতনের কারণগুলো দূর করে সমাজে নারী-পুরুষের সমতা বিধানে সচেষ্ট হতে হবে।